নগর পরিকল্পনা:-
হরপ্পা সংস্কৃতির উৎপত্তি যেভাবেই হোক না কেন তার বিস্তার কম বা বেশী যাই হোক না কেন সিন্ধু অঞ্চলের বিভিন্ন ধ্বংসাবশেষ থেকে এই সভ্যতার এই সুস্পষ্ট চিত্র পাওয়া যায়। পরিকল্পিতভাবে নির্মাণ হরপ্পা সভ্যতা সংস্কৃতির একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য ।ঐতিহাসিক লুথার মনে করেন যে ,মহেঞ্জোদারো নাগরি পতনের সময় নগরীর পরিকল্পনা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর্যায় অতিক্রম করে উন্নতির চরমসীমায় উপনীত হয়েছিল ।এবং মহেঞ্জোদারো হরপ্পা তার নিদর্শন পাওয়া যায়।
মহেঞ্জোদারো শহরটির পশ্চিম দিকে প্রায় 40 ফুট উঁচু একটি বিশাল আয়তন ঢিপির ওপর দুর্গ ছিল। এই দুর্গ অঞ্চলে কিছু ঘরবাড়ি ও ছিল মনে হয় সেগুলি শাসকদের বাসস্থান ছিল ।দুর্গ অঞ্চলে সর্বসাধারণ ব্যবহারের উপযোগী একটি বিশাল বাঁধানো স্নানাগার অবস্থিত ছিল ।তার আয়তন ছিল দৈর্ঘ্য 180 ফুট এবং প্রস্থ108 ফুট ।এর চারিদিকে ঘিরে আছে 8 ফুট উঁচু ইটের দেওয়াল, কেন্দ্রস্থলে আছে একটি জলাশয় 39 ফুট লম্বা এবং 23 ফুট চওড়া এবং 8 ফুট গভীর জলাশয় এর নোংরা জলনিকাশি ও তাতে পরিষ্কার জলপূর্ণ হওয়ার ব্যবস্থা ছিল ।ঋতুভেদে জল গরম বা ঠান্ডা করার ব্যবস্থা ছিল।
এই পাশেই ছিল কেন্দ্রীয় শস্যাগার এর আয়তন ছিল দৈর্ঘ্য200 ফুট প্রস্থে 150 ফুট এ .এল.ব্যাসাম এটিকে রাষ্ট্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে তুলনা করেছেন। এরই পাশাপাশি স্যার হুইলার বলেছেন যে খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম শতকের পূর্বে এ ধরনের বিশাল আয়তনের শস্যাগার পৃথিবীতে কোথাও পাওয়া যায়নি ।এই অঞ্চলে অন্যান্য বাড়ির ধ্বংসাবশেষ কে পণ্ডিতরা সভাকক্ষ ,শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সমিতি বলে চিহ্নিত করেছেন।
দুর্গ অঞ্চলের উঁচু ঢিবির পূর্ব দিকে নিচু জমিতে মূল শহরটি গড়ে উঠেছে। নগরের উত্তর দক্ষিণ এবং পূর্ব পশ্চিম দিকে সমন্তরাল কয়েকটি রাস্তা চলে গেছে ।রাস্তাগুলি থেকে 9 থেকে 30 ফুট চওড়া ,এই রাস্তাগুলি থেকে বেরিয়ে এসেছে অসংখ্য গলি ,গলি গুলোর দুপাশে নাগরিকদের ঘরবাড়ি, ঘরবাড়িগুলো ছিলো পোড়ামাটির তৈরি এবং অনেক বাড়িই ছিল দোতলা,বা তিনতলা। প্রত্যেক বাড়িতে প্রশস্ত উঠোন, স্থানাগার কুয়ো এবং নর্দমার ব্যবস্থা ছিল ।অনেক বাড়িতে আবার সোকপিঠ ছিল রাত্রির নোংরা জল নর্দমা দিয়ে এসে রাস্তায় ঢাকা দেওয়া বাঁধানো নর্দমায় পড়তো। নর্দমাগুলি পরিষ্কারের জন্য ম্যানহলের ব্যবস্থা ছিল প্রসঙ্গে বলেন ড: এ. এল.ব্যাসাম বলেন যে সভ্যতার পূর্বে অপর কোন প্রাচীন সভ্যতার পরিণত ব্যবস্থা ছিল না। প্রত্যেক বাড়ির সামনে বাঁধানো ডাসবিন ছিল। কেবল মাত্র বড় রাস্তার ওপরে শহরের দোকানগুলি অবস্থিত ছিল ।শহরের উত্তর-পূর্ব কোন সারিবদ্ধ ভাবে ছোট ছোট কুঠরী ঘর ছিল মনে করা হয় ।এগুলি দরিদ্র ও শ্রমজীবি মানুষের বাসস্থান ছিল। অধ্যাপক গর্ভন চাইল্ড বলেছেন যে ,হরপ্পার পৌরশাসক বা গৃহ নির্মাণ সংক্রান্ত আইন মেনে চলতে।